ভিজা জানালা

 


পাবনা শহরের প্রতিটি কোণায় যেনো নাসির আর প্রিয়ন্তিকার স্মৃতি আঁকা। হাইস্কুল থেকেই তাদের বন্ধুত্ব, আর সেই বন্ধুত্বের গাঢ় রঙ এখন প্রেমের রূপ নিয়েছে। প্রিয়ন্তিকার হাসিতে নাসিরের সকাল শুরু হয়, আর প্রিয়ন্তিকার কথা না শুনলে নাসিরের দিনটা যেন কেটে যায় না।

দিনগুলো চলছিলো এমনই মিষ্টি প্রেমের গল্প নিয়ে, হঠাৎ একদিন প্রিয়ন্তিকা জানালো সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাবে। নাসিরের মনটা খুশিতে ভরে উঠলেও কিছুটা চিন্তাও হচ্ছিল। পাবনা থেকে দূরে, নতুন জায়গা, নতুন মানুষ—কিছুটা উদ্বেগ তো থাকেই। কিন্তু প্রিয়ন্তিকার পাশে থাকতে নাসিরও সিদ্ধান্ত নিলো তার সঙ্গী হবে এই যাত্রায়।

রাতের বাস, বাইরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। প্রিয়ন্তিকার বাবা প্রিয়ন্তিকার আরেক বান্ধবী আইরিনসহ চারজন মিলে রওনা হলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। নাসির কিন্তু ছদ্মবেশে,  প্রিয়ন্তিকার পিছনের সিটে বসা নাসির, চোখের কোণায় প্রিয়ন্তিকার প্রতিটি পদক্ষেপ নজর রাখছিলো।

প্রিয়ন্তিকা বসেছিল জানালার পাশে। কিছুক্ষণ পরে বাইরে বৃষ্টির ফোঁটা দেখতে দেখতে জানালা খুলে হাত বের করে দেয় প্রিয়ন্তিকা। বৃষ্টির ফোঁটা যেন ওর হাতের সাথে খেলছিল, সেই মুহূর্তেই নাসির আর চুপ থাকতে পারল না। ধীরে ধীরে সে তার হাতও বের করলো জানালা দিয়ে, আর প্রিয়ন্তিকার হাতটা আলতো করে ধরল।

প্রিয়ন্তিকা প্রথমে একটু চমকে উঠল, কিন্তু চোখ তুলে তাকাতেই দেখে নাসির। দুজনের চোখের মাঝে একটা নীরব কিন্তু গভীর কথা হলো, যেন এই মুহূর্তটা তারা চিরকালের জন্য ধরে রাখতে চায়। চারপাশে বৃষ্টির সুর, রাতের নিস্তব্ধতা, আর ভেজা জানালার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা পৃথিবী—সবকিছুই যেন তাদের এই প্রেমের সাক্ষী।

ভোর ৫টার দিকে বাস পৌঁছালো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে। ভোরের আলো ফুটেছে, বাতাসে এক ধরনের সতেজ ভাব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, সবুজে ঘেরা পথ, ক্যাম্পাসে ঢোকার পরপরই প্রিয়ন্তিকা ধীর পায়ে চলতে থাকে। ক্যাম্পাসের চারপাশের গাছগাছালিতে হালকা রোদ পড়েছে, মাঝে মাঝে পাখিদের কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে। ক্যাম্পাসের পথে পথে অনেক শিক্ষার্থী হাঁটছে, তাদের চোখে স্বপ্ন, মনে হাজারটা চিন্তা। কিন্তু প্রিয়ন্তিকার মন ছিল অস্থির। পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা চিন্তায় ছিল সে, আবার অন্যদিকে নাসিরের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে পড়ছিল বারবার।

নাসির সারা দিন প্রিয়ন্তিকাকে ফলো করল, কিন্তু তার নজরে ছিল প্রিয়ন্তিকার বাবা। নাসিরকে দেখে প্রিয়ন্তিকার বাবা প্রথমে ভেবেছিলেন সে আইরিনকে ফলো করছে। কিন্তু নাসিরের সব নজর শুধুই প্রিয়ন্তিকার উপর।

ক্যাম্পাসের প্রতিটি পথে যেন তাদের প্রেমের একটি করে চিহ্ন রেখে যাচ্ছে। চোখে চোখে সেই নাসির আর প্রিয়ন্তিকার কথা, যেখানে শব্দের প্রয়োজন নেই, শুধু অনুভবের একটা শক্ত বাঁধন।

পরীক্ষা শেষে প্রিয়ন্তিকা যখন হেটে যাচ্ছিল তার বাবার দিকে, নাসিরও ধীর পায়ে প্রিয়ন্তিকার কাছে এলো। প্রিয়ন্তিকা একটু হাসল, আর নাসিরের দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি ছিলে বলেই আজকের দিনটা এত সুন্দর হলো।"

নাসিরও হাসল, "তুমি আছো বলেই তো আমি আছি।"

প্রিয়ন্তিকা নাসিরের দিকে আবার তাকাল। নাসিরের চোখে সে দেখতে পেল নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতিফলন। আর বললো "আমাদের গল্পটা যেন সবসময় সুন্দর হয়।"

প্রিয়ন্তিকার পরীক্ষার দিনটি কাটলো নাসিরের সঙ্গেই, আর সেই দিনের মেঘলা আকাশ আর বৃষ্টির মতোই তাদের প্রেমের আকাশে মিশে থাকলো আরও অনেক না বলা কথা, অনেক অনুভূতি।

শেষ বিকেলের আলোয় তারা যখন ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে এলো, তখন তাদের মন এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরে গিয়েছিল। পাবনার পথে ফিরে যাওয়ার সময়ও তারা জানালার পাশে বসে ছিল, যেন সেই বৃষ্টিভেজা জানালা তাদের সম্পর্কের সাক্ষী হয়ে থাকবে চিরকাল।

তাদের জীবনের পথটা নানা চ্যালেঞ্জে ভরা, কিন্তু সেই বৃষ্টিভেজা জানালা আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দিন তাদের হৃদয়ে একটি চিরকালীন স্মৃতি হয়ে রয়েছে। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ্যাডভেঞ্চার ড্রিম

প্রিয়ন্তিকার চিঠি, এক পৃষ্ঠায় ৩২ বার লেখা ভালোবাসি!