লাল শাড়ির মোহ

ডেঙ্গু জ্বরে কাবু হওয়ার পর হাসপাতালের পাঁচটা দিন যেনো একেকটা যুগের মতো কাটছিল নাসিরের জন্য। ঢাকায় থাকতে তার অসুস্থ শরীর নিয়ে সবসময় একটা অস্থিরতা কাজ করছিল, কারণ সে জানত প্রিয়ন্তিকার ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষা চলছে। পাঁচটা দিন হাসপাতালে থাকার পর নাসির একটু সুস্থ হয়ে রিলিজ নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি চলে যায়। 

পরের দিন সকালে নাসির ঘুম থেকে উঠে দেখে প্রিয়ন্তিকা তার শাড়ি পরা ফটো পাঠিয়েছে! সেদিন ভাইবা পরীক্ষায় থাকায় সেদিনের জন্য প্রিয়ন্তিকা শাড়ী পরেছে ফর্মাল লুকের জন্য। একটা লাল শাড়ী। যখন নাসির শাড়ি পরা ছবি দেখলো, তখন নাসিরের মন যেনো ভরে উঠল আনন্দে। কিন্তু ছবির সৌন্দর্যে তৃপ্তি পাচ্ছিল না! সে প্রিয়ন্তিকাকে সামনে থেকে দেখতে হবে এটা ঠিক করল।

অসুস্থ শরীরের তোয়াক্কা না করে নাসির প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে প্রিয়ন্তিকার ক্যাম্পাসে গেল।"পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়"  গন্তব্য ক্যাম্পাসের লেকের পারে, যেখানে গিয়ে কল দিল প্রিয়ন্তিকাকে"লেকের পারে আসো তো একটু।" 

পাহাড়ি হাওয়ার মতো শান্ত একটা মুহূর্ত। সামনে এসে দাঁড়ালো প্রিয়ন্তিকা একটা লাল শাড়ি পরে, হাতে চুরি, চোখে হালকা কাজল আর কপালে ছোট্ট টিপ। নাসিরের মনে হলো, যেনো একটা লাল পরী তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তার চোখ প্রিয়ন্তিকার উপর আটকে রইল। সেই মুহূর্তে সময় থেমে গেলো নাসিরের জন্য। প্রিয়ন্তিকার হাসি, তার চুলের এলোমেলো খেলা, শাড়ির ভাঁজে সূর্যের আলো সব মিলিয়ে যেনো স্বর্গীয় সৌন্দর্য।

কিছুক্ষণ পরেই প্রিয়ন্তিকার ভ্রু কুঁচকে গেলো। "তুমি অসুস্থ শরীরে এখানে এসেছ কেনো?" তার গলায় চিন্তার ছোঁয়া। 

নাসির একটু হাসলো, "তোমাকে দেখার জন্য এই শরীর কোনো বাধা হতে পারে না। লাল শাড়িতে তোমায় দেখার জন্য এই পথটুকু তো খুবই সামান্য।"


প্রিয়ন্তিকা এক মুহূর্তের জন্য চুপ হয়ে গেল। যদিও সে রাগ দেখাচ্ছিল, কিন্তু তার চোখের কোণায় ভালোবাসার একটা মিষ্টি আভা ছড়াচ্ছিল। নাসির জানত, তার এই অনুভূতি প্রিয়ন্তিকা বুঝবে। সেদিনের লাল শাড়ি আর প্রিয়ন্তিকার সেই সৌন্দর্য, নাসিরের মনে চিরদিনের জন্য গেঁথে গেল। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ্যাডভেঞ্চার ড্রিম

প্রিয়ন্তিকার চিঠি, এক পৃষ্ঠায় ৩২ বার লেখা ভালোবাসি!

ভিজা জানালা