বৃষ্টির দিন, রোদ্দুরের প্রেম

আজ খুব ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেছে নাসির। আজকের দিনটা তার জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয়ন্তিকা, যার জন্য তার হৃদয়ে এত গভীর ভালোবাসা, আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। নাসিরের ইচ্ছে ছিল ওর সাথে একই বাসে যাত্রা করার, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সে বাস মিস করে বসে। নিরুপায় হয়ে নাসির আরেকটি বাসে চেপে বসে, মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায়।


বাসে বসে নাসিরের মনটা এলোমেলো চিন্তায় ভরে যায়। সে জানে, প্রিয়ন্তিকার চাচ্চু সাথে আছে, তাই সে একদমই একা নয়। কিন্তু নাসিরের মন বলে, প্রিয়ন্তিকার পাশে থাকার দায়িত্বটা যেন তারই ছিল। বাস চলতে থাকে, আর নাসিরের মনের ভিতর অস্থিরতা বাড়তে থাকে। রাজশাহীর পথে বাস ছুটে চলে, নাসির জানে, ক্যাম্পাসে পৌঁছেই তাকে প্রিয়ন্তিকাকে খুঁজে বের করতে হবে, যে কোনো মূল্যেই হোক।


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানোর পর নাসির দ্রুত ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। সেখানে হাজার হাজার পরীক্ষার্থী, প্রত্যেকেই যেন নাসিরের চোখের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। প্রতিটা মুখের মধ্যে সে প্রিয়ন্তিকার ছায়া খুঁজে ফেরে, কিন্তু তার মন যেন ওকে চিনে নিতে চাইছে না। শেষমেশ, সেই পরিচিত মুখটা খুঁজে পেতে তার বুকটা প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। প্রিয়ন্তিকার মুখে ক্লান্তির ছাপ, চোখে একটু অবসাদ, কিন্তু নাসিরকে দেখে সে যেন একটু স্বস্তি পেল। দুজনের চোখে চোখ পড়ল, আর সেই মুহূর্তে হাজারো কথার বিনিময় হয়ে গেল।


প্রিয়ন্তিকার চাচ্চু কাছে বসে ছিলেন, আর নাসির দূর থেকে ইশারায় প্রিয়ন্তিকাকে বলল তার দিকে আসতে। প্রিয়ন্তিকা চাচ্চুকে বলল, "চাচ্চু, আমি একটু শরবত খেয়ে আসি, আপনি এখানেই থাকুন।" প্রিয়ন্তিকা এসে নাসিরের পাশে দাঁড়াল, আর দুজনেই একটু সময়ের জন্য হারিয়ে গেল একে অপরের মধ্যে। শরবত খেতে খেতে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে লাগল, যেখানে তাদের পৃথিবীটা একসাথে রচিত হবে।


নাসিরের চোখ প্রিয়ন্তিকার দিকে বারবারই আটকে যাচ্ছিল। শুধু তার সৌন্দর্যের জন্য নয়, প্রিয়ন্তিকার মেধা ও দক্ষতাও নাসিরকে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করে। এই মেয়ে শুধু দেখতে সুন্দরই নয়, তার মনটাও একেবারে খাঁটি সোনা। প্রিয়ন্তিকা জানে, সে জীবনের প্রতিটা চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তার পরীক্ষার প্রস্তুতি ছিল নিখুঁত, প্রতিটি বিষয়ের উপর সে নিজের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। তার প্রতিটি পদক্ষেপে ছিল আত্মবিশ্বাস, যা দেখে নাসিরও মুগ্ধ হয়েছিল। 


প্রিয়ন্তিকার অধ্যবসায় ও মনোযোগ দেখে নাসিরের মনে হয়েছিল, এমন একটা মেয়ে জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রেই সফল হতে পারে। সে জানত, প্রিয়ন্তিকা শুধু বইয়ের পাতা ঘেঁটেই নয়, বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো থেকেও অনেক কিছু শিখেছে। তার দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাধারা, এবং সমস্যার সমাধানের দক্ষতা প্রতিটি বিষয়েই তার অনন্য প্রতিভার প্রমাণ ছিল। 


কিছুক্ষণ পর প্রিয়ন্তিকা আবার চাচ্চুর পাশে ফিরে গেল। কিন্তু নাসিরের চোখে সেই মুহূর্তগুলো চিরস্থায়ী হয়ে গেল। আর নাসির দূর থেকে চাচ্চুর চোখ ফাঁকি দিয়ে তাকে দেখে। চাচ্চু জানেন না, নাসিরের সাথে প্রিয়ন্তিকার এই গভীর সম্পর্কের কথা। 


যখন পরীক্ষার সময় হলো, প্রিয়ন্তিকা কেন্দ্রে ঢুকল। নাসির বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল, যেন তার হৃদয়ের একটা অংশ সেই কেন্দ্রে বন্দী হয়ে গেছে। সে চাচ্চুর কাছাকাছি থাকে, যেন পরীক্ষা শেষে প্রিয়ন্তিকাকে আবার দেখতে পায়। সময় যেন কচ্ছপের মতো চলতে থাকে। অবশেষে, পরীক্ষার ঘণ্টা শেষ হলো। প্রিয়ন্তিকা বেরিয়ে আসল, নাসিরের চোখে তখনই আবার সেই প্রশান্তি ফিরে এলো।


কিন্তু হঠাৎ করেই আকাশ কালো হয়ে উঠল, আর মুহূর্তের মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হলো। দুজনেই ভিজে ভিজে ক্যাম্পাস থেকে বের হলো। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যেন তাদের ভিজিয়ে দিচ্ছিল, কিন্তু একসাথে সেই ভেজা মুহূর্তগুলোতে তাদের মধ্যে আরও গভীর ভালোবাসার সঞ্চার হলো। বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে যাওয়ার সময় নাসির অনুভব করল, এই বৃষ্টি যেন তাদের প্রেমের প্রতীক—ভেজা ভালোবাসার মতো যা কোনো কিছুতেই শুকিয়ে যায় না, বরং আরও গভীরে প্রবাহিত হয়।


বৃষ্টি থামার পর, প্রিয়ন্তিকা তার বাসে উঠে চলে গেল। নাসির তাকিয়ে রইল, যতক্ষণ পর্যন্ত বাসটা তার চোখের সামনে ছিল। তারপর নাসির নিজেও নিজের বাসে উঠল, কিন্তু তার মনটা রাজশাহীতে রয়ে গেল। পাবনায় ফিরে সে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিল, "রাজশাহীতে ভিজে কাক হয়ে গেছিলাম, পাবনা এসে রোদ্দুরে শুকিয়ে বক হয়ে যাচ্ছে।"


নাসিরের জন্য এই দিনটা শুধুই একটা দিন ছিল না; এটা ছিল তার এবং প্রিয়ন্তিকার জন্য একটা স্মৃতির অধ্যায়, যা হয়তো তারা সারাজীবন ধরে মনে রাখবে। তাদের ভালোবাসার এই ছোট্ট মুহূর্তগুলোই তাদের জীবনের বাকি অংশে তাদের পথ দেখাবে। ভালোবাসা শুধু আনন্দের নয়, এটা বৃষ্টি আর রোদ্দুরের মিশেলে তৈরি, যেখানে প্রতিটা ফোঁটা এক একটি স্মৃতি হয়ে রয়ে যায়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ্যাডভেঞ্চার ড্রিম

প্রিয়ন্তিকার চিঠি, এক পৃষ্ঠায় ৩২ বার লেখা ভালোবাসি!

ভিজা জানালা